সাজেক ভ্যালি – বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র

Spread the love

সাজেক ভ্যালি- বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র :

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সাজেক সম্পর্কে নানান তথ্য নিয়ে। এর ফলে আপনারা সাজেক নিয়ে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

সাজেক

সাজেক সম্পর্কে বিস্তারিত: 



দৃষ্টি মেলিয়া দেখার আগে চক্ষু খোলা অর্থাৎ জ্ঞান ও চক্ষুর উন্মেষ ঘটানো প্রয়োজন। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সবচাইতে বড় ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন সাজেক এর অপরুপ সৌন্দর্যের কাছে এসে মনটাকে ছুটি দিলে। এই সাজেক সম্পর্কে বলা যায় আকাশ ছোঁয়া পাহাড় চূড়ায় দৃষ্টি দিলে মনটা জুড়ায়। সাজেক এর সৌন্দর্যের তুলনা নেই। সাজেক হচ্ছে তেমনি একটি স্থান।

যেখানে এলে হৃদয়ে প্রশান্তি মেলে। সাজেক এর আয়তন হচ্ছে ৬০৭ বর্গমাইল। সাজেক রাঙামাটি জেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও পাহাড়িকন্যা সাজেক আসতে খাগড়াছড়ি থেকে সড়ক পথে আসতে বেশি সুবিধাজনক। বর্তমানে সাজেক এর পর্যটন শিল্পকে উন্নত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার চমৎকার পিচ ঢালা রাস্তা। সড়কপথে আঁকা

বাকা পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে সাজেক এর সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠতেই অন্যরকম এক ভালোলাগার অনুভূতিতে ভরে যায় মন। একসময় সাজেক এর রাস্তা ভালো ছিলো না বলে মানুষ অতটা সাজেক ঘুরতে যেত না। বর্তমানে সাজেক রুপান্তর হয়েছে অপরুপ এক পর্যটন কেন্দ্রে। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি এই সাজেকে রয়েছে অসংখ্য উচুনিচু ঢেউ খেলানো পাহাড়। যেগুলো প্রাকৃতিক ভাবেই সবুজ বনায়নে ভরা।

পাহাড়ের উপর দিয়ে মেঘের আনাগোনা দেখলে মনে হয় যেন কুয়াশা ছেয়ে গেছে চারপাশ সাজেক বেড়াতে গেলে সবাই এমন রিসোর্টে থাকতে চায় সাজেক এর অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।

সাজেক ভ্যালি

সাজেক রিসোর্ট লিস্ট : 

এত এত রিসোর্টের মধ্যে সেবা ও মানে কোন রিসোর্ট সবচেয়ে ভালো, কোন রিসোর্ট থেকে মেঘের ভালো ভিউ পাওয়া যায় এমন সব নানা প্রশ্নের উত্তর দেবো আপনাদের। সাজেক এর মুগ্ধ হওয়ার মত সেরা কিছু

সাজেক রিসোর্ট সম্পর্কে জানাবো :

মেঘপুঞ্জি রিসোর্টঃ

সাজেক এর সবচেয়ে আকর্ষনীয় ও জনপ্রিয় রিসোর্টের নাম মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট। সুন্দর ইকো ফ্রেন্ডলি ডেকোরেশনের ও আকর্ষনীয় লেন্ডসকেপ ভিউ সহ মেঘপুঞ্জি রিসোর্টে তারাসা,পূর্বাসা রোদেলা ও মেঘলা নামের ৪টি কটেজ রয়েছে। প্রতিটি কটেজে সর্বোচ্চ



৪জন থাকার সুযোগ রয়েছে। এর তিনটি কটেজের ভাড়া ৪০০০টাকা আর অন্য একটি কটেজের ভাড়া ৪৫০০ টাকা এতে ২৪ ঘন্টা পানি এবং বিদ্যুৎ এর সুবিধা রয়েছে। অধিক জনপ্রিয়তার জন্য ভ্রমনের কিছুদিন আগে এটি বুকিং করে রাখতে হয়।

মেঘ মাচাং :

সুন্দর ভিউ এর জন্য রুই লুই পাড়ায় অবস্থিত মেঘ মাচাং রিসোর্ট অনেকের পছন্দ। এখানে উডেন এবং বেম্বু এর সর্বমোট পাঁচটি কটেজ রয়েছে। ছুটির দিন ব্যতীত বেম্বু কটেজের ভাড়া ৩৫০০ টাকা এবং উডেন কটেজের ভাড়া ৪০০০ টাকা। আর ছুটির দিনে বেম্বু কটেজের ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং উডেন কটেজের ভাড়া ৪৫০০ টাকা। প্রতিটি কটেজের সাথে আছে মেঘ উপভোগ

করার জন্য খোলা বারান্দা। এখানে খাওয়া দাওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।

আদ্রিকা ইকো কটেজঃ

যারা খোলামেলা পরিবেশে নিজেদের মত থাকতে চান। তাদের জন্য আদ্রিকা ইকো রিসোর্ট আদর্শ জায়গা। টিজিবি লুসাই কটেজের পেছনে এই রিসোর্টের অবস্থান। রিসোর্টের প্রশস্ত বারান্দা থেকে অপূর্ব প্রাকৃতিক ল্যান্ডস্কেপ উপভোগ করা যায়। যা সবাইকে আকর্ষণ করে। এই রিসোর্টে কেবল মাত্র দুইটি বড় কক্ষ রয়েছে।



প্রতিটি কক্ষে একটি মাস্টার বেড এবং একটি এক্সট্রা ম্যাট্রেস রয়েছে। যাতে সর্বোচ্চ ৪জন শুতে পারবেন। ছুটির দিন ব্যতীত এর ভাড়া ৪০০০ টাকা আর ছুটির দিনে এর ভাড়া ৩৫০০ টাকা হবে।

জুমঘর ইকো রিসোর্টঃ

রুই লুই পাড়ার ক্লাবের পেছনে অবস্থিত জুমঘর ইকো রিসোর্ট। নান্দনিক উপস্থাপনের জন্য সাজেক ভ্রমণ কারীদের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। থাকার জন্য এই রিসোর্টে প্রিতক কটেজে মোট ৪টি কাপল কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ ৪জন শুতে পারবে। এর সারাবছর ৪০০০ টাকা ভাড়া থাকে।

চাদের বাড়ির রিসোর্টঃ

মেঘের সমুদ্র দেখার জন্য রক গার্ডের বিপরিত পাশে অবস্থিত চাদের বাড়ির রিসোর্ট বেশ আদর্শ জায়গা। এই রিসোর্টে সর্বমোট ৮ টি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষ থেকে নিজুরাম পাহাড়ের সুন্দর ভিউ দেখা যায়। ছুটির দিনে প্রিমিয়াম কটেজের ভাড়া ৪০০০ টাকা, ছুটির দিন ছাড়া ৩৫০০ টাকা। আর ছুটির দিন ব্যতীত ইকোনমি কটেজের রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা এবং ছুটির দিন বাদে ৩০০০ টাকা। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ

ঢাকা টু সাজেক ভ্যালি ভ্রমন খরচ ও কিভাবে কি করবেনঃ

কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে শ্যামলী,হানিফ,শান্তি পরিবহণ সহ আরও অনেক গাড়ি খাগড়াছড়ি যায়। ভাড়া ৫০০- ৬০০ টাকা। সবগুলো গাড়ি রাত ১০টার পর ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। এরপর খাগড়াছড়ির শাপলা চত্ত্বর থেকে সামনে

গেলে মাহেন্দ্রা গাড়ির পরিচালক সমিতি পাবেন। সেখানে যে কয়দিন থাকবেন সে অনুযায়ী ভাড়া নিয়ে নেন। গ্রুপে অল্প মানুষ থাকলেও অপেক্ষা করুন আরেক গ্রপের সাথে মিলে চলে যান। এবার সাজেক ভ্রমন শুরু। মনে রাখতে হবে, সকাল ৯টার ভিতর আপনাকে আরমি স্কোয়াটের সাথে করে সাজেক যেতে হবে। কোনো ভাবে স্কট মিস করলে বিকাল ৩টার স্কট ধরবেন।



যেহেতু সাজেক একটি বর্ডার এরিয়ার জায়গা সেহেতু সেনাবাহিনীর আন্ডারে যেতে হবে। পথিমধ্যে প্রায় ৩টি জায়গায় চেক ইন হবে। যারা চাদের গাড়ির মত ছাদে যাওয়ার প্ল্যান করছেন তারা আপাতত দুরে থাকুন কারন সেনাবাহিনী কখনো ছাদে বসে যেতে দেবে না। এবার সাজেক যাওয়ার পালা। প্রতি পাশের গাছপালার সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

কখনো ওপর দিকে রাস্তা উঠে চলে যাবে আবার কখনো নিচে। এভাবে ২-৩ ঘন্টায় আপনি পৌছে যাবেন সাজেকসাজেক পৌঁছে আপনাদের খুজতে হবে থাকার জায়গা যা সম্পর্কে আমরা আগেই আলোচনা করেছি।

খাবারঃ

সাজেক এর সব খাবারের হোটেলে খাবারের প্যাকেজ প্রায় একই। জনপ্রতি প্যাকেজ রয়েছে ১০০-২০০ টাকার মধ্যে। এরপর

সাজেকে রয়েছে দেখার মত আরও অনেক জায়গা যেমনঃ

কংলাক পাড়া, হ্যালিপ্যাড। সাজেক এর দুটি মুহুর্ত কখনোই মিস দেওয়া উচিত নয় সূর্যদয় আর সূর্যাস্ত। যা খুবি মনোমুগ্ধকর, অপরুপ। মন ভরে যাওয়ার মত।

 সাজেক রিসোর্ট সম্পর্কে জানাবো

সাজেক ভ্যালি :

সাজেক রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। মূলত এটি একটি নদীর নাম যা বাংলাদেশকে ভারত থেকে পৃথক করে। নদীটি পার্বত্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হয়েছে। সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটির উত্তর কোণে, মিজোরাম সীমান্ত,  সীমান্ত এলাকার কাছে অবস্থিত। সাজেক ভ্যালি  উপত্যকাটি ১৮০০ ফুট উঁচু সমুদ্রের স্তর থেকে ।

পাহাড়ের মধ্য দিয়ে অনেক ছোট নদী প্রবাহিত হয়েছে তাদের মধ্যে কাচালন এবং মাচালং বিখ্যাত। উপত্যকার প্রধান জাতিগত সংখ্যালঘু হল চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, পানকুয়া, লুশাই এবং সাগমা। জায়গাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং রাঙামাটির ছাদের জন্য পাহাড়ী রানী হিসেবে পরিচিত। মারিশশা সাজেক ভ্যালির কাছে একটি জায়গার নাম।



বেশিরভাগ বাড়ি বাঁশ দিয়ে তৈরি। সাজেকের কাছে আরেকটি জায়গা আছে, সেটি হল কানলক, এবং এটি কমলা বাগানের জন্য বিখ্যাত। স্পটের সবচেয়ে আকর্ষণ সূর্য ডোবা, বৃষ্টি, সকাল, সন্ধ্যা, এবং রাত এবং আদিবাসী মানুষ। পর্যটকরা হাট (বাজার) থেকে আদিবাসীদের পণ্য কিনতে পারেন। রাস্তাগুলি পাহাড়ে বড় সাপের সর্পিলের মতো।

এখানে অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ এবং অন্যরা খ্রিস্টান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্দেশনায় রুইলুই পাড়া পর্যন্ত একটি নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পথে যাত্রীকে সেনা ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুবই সহায়ক এবং সহযোগী। এখন এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়।

উপত্যকা রাঙ্গামাটিতে কিন্তু পর্যটকরা খাগড়াছড়ি থেকে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। রুট হল খাগড়াছড়ি – দীঘিনালা বাজার – বাঘাইহাট বাজার – মাচালং হাট – তারপর সাজেক। এটি খাগড়াছড়ি থেকে ৬২  কিলোমিটার দূরে। দীঘিনালা থেকে সাজেক ৪০০ কিলোমিটার ।

আশা করি আপনাদের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিতে পেরেছি। ধন্যবাদ।

( গরুর মাংস রান্না সম্পর্কে জানতে এইখানে ক্লিক করে পড়ুন )

( রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এইখানে ক্লিক করে পড়ুন )

Leave a Comment