গরুর মাংস রান্না রেসিপি :
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। গরুর মাংস রান্না আমাদের বাঙ্গালিদের খুবি প্রিয় একটি খাদ্য। গরুর মাংস রান্না করা হলে সবার মুখে অটো পানি চলে আসে।
বাঙালীরা যখন মেহমানদের দাওয়াত করে খাওয়ায় তখন খাবারে গরুর মাংস রান্না একিট কমন ডিশ। তাই আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি দুটি পদের গরুর মাংস রান্না। আলু দিয়ে গরুর মাংস আর বিয়ে বাড়ির গরুর মাংস রান্না। চলুন শুরু করা যাক।
প্রথমে আমরা আলু দিয়ে গরুর মাংস রান্না করা শেখবো :
উপকরণঃ
- ১কেজি গরুর মাংস (হাড়, চর্বি সহ)
- ১ টেবিল চামচ রসুন বাটা
- ১ টেবিল চামচ আদা বাটা
- ২ চা চামচ জিরাগুড়া
- লবন স্বাদমত
- ২ চা চামচ হলুদগুড়া
- ১ চা চামচ লাল মরিচগুড়া
- টমেটো কুচি (অপশনাল)
- দেড় টেবিল চামচ তেল
- এলাচ ৪টি
- তেজপাতা ১টি
- দারুচিনি ২ টুকরা
- ১ কাপ পেয়াজ কুচি
- আলু ৪টি মাঝারি আকারে কাটা
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথম ধাপ :
গরুর মাংস, আদা,রসুন বাটা, জিরাগুড়া,লবন, হলুদগুড়া,লাল মরিচগুড়া, টমেটোকুচি, তেল একসাথে একটি বাটিতে হাত দিয়ে মেখে নিতে হবে। আপনারা চাইলে সমস্ত মশলাকে কষিয়ে তারপরও রান্না করতে পারেন। এরপর চুলায় বসিয়ে দিন। পেয়াজ কুচি, এলাচ,তেজপাতা,দারুচিনি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
দ্বিতীয় ধাপ :
মেশানোর পর একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে, চুলার আঁচটা মাঝারিতে রেখে ১০ মিনিট রান্না করে নিবেন। ১০মিনিট পর ঢাকনা টি উঠিয়ে দেখা যাবে মাংস থেকে অনেকটা পানি উঠে এসেছে। সবকিছু আবারো একটু নেড়ে দিতে হবে। আবার ঢাকনা দিয়ে এই পানিতে মাংসটিকে ১৫মিনিটের মত কষিয়ে নিতে হবে।
তৃতীয় ধাপ:
এর মাঝখানে ২ বার নাড়তে হবে। ১৫ মিনিট পর ঢাকনা উঠালে দেখা যাবে মাংসটা বেশ কষানো হয়ে গেছে এবং তেলও উপরে উঠে আসবে। এখন এতে দিতে হবে হাফ কাপ পরিমান পানি আরও কিছুক্ষণ কষানোর জন্য। পানিটা দেয়ার পর মাংসটা নেড়ে দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে চুলাটা মিডিয়াম লো আঁচে মাংসটি আরও কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে।
চতুর্থ ধাপ:
কষানোর মাধ্যমেই মাংসটিকে সেদ্ধ করা হবে। ঝোল করে যদি গরুর মাংস রান্না করেন তাহলে ঝোলের পানিটা একবারে না দিয়ে, অল্প অল্প করে পানি দিয়ে কষানোর মাধ্যমে মাংসটিকে সেদ্ধ করে নেয়ার পরে ঝোলের পানিটা দেয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। এতে করে মাংসটা অনেক টেস্টি হয়।
পঞ্চম ধাপ:
মাঝে দুবার পানি হাফ কাপ দিয়ে, এবার দেড় কাপ পানি দেবেন এর মধ্যে মাংসটা ৫০-৬০% সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ঝোলের পানি দেয়ার পর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে আরও কিছুক্ষণ রান্না করবেন। এরপর আলুর টুকরো গুলো দিয়ে আবার ঢেকে দিন। চুলার আঁচ মিডিয়াম রেখে আলু ও মাংসটা পুরোপুরি সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
ষষ্ঠ ধাপ:
এরপর সেদ্ধ হয়ে গেলে, ঢাকনা ছাড়া ১০মিনিট নেড়ে রান্না করুন। এতে তেলটাও উপরে উঠে আসবে এবং তরকারির কালারটাও সুন্দর হবে। ঝোলটা ঘন হয়ে আসলে বোঝা যাবে রান্নাটা হয়ে গিয়েছে। এবার চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এবং পরিবারের সাথে লাঞ্চ অথবা ডিনারে খাবেন। আশা করি সবার রেসিপিটা ভালো লেগেছে ধন্যবাদ।
এবার আমরা বিয়ে বাড়ির গরুর মাংস রান্না বা বিয়ে বাড়ির শাহী রেজালা শিখব :
উপকরনঃ
- ১ কেজি বড় বড় সাইজের গরুর মাংস কাটা
- ১ কাপ পেয়াজ কুচি
- ১.৫ টেবিল চামচ আদা-রসুন বাটা
- ৭-৮ টা কাঁচা মরিচ মাঝখানে অল্প করে কাঁটা
- ১/৪ কাপ ঘি
- ১/৪ কাপ তেল
- ৪-৫ টা আলু বোখারা
- ১ টেবিল চামচ ধনিয়ার গুড়া
- ১/২ টেবিল চামচ হলুদের গুড়া
- ১/২ টেবিল চামচ লাল মরিচের গুড়া
গরম মশলাঃ
- ১ টা বড় দারুচিনির টুকরা
- ৪-৫ টা এলাচ
- ২-৩ টা লং
- ২ টি তেজপাতা
- লবন স্বাদমত
- ১ চা চামচ কেওড়া জল
- ২ টেবিল চামচ ক্রিম বা ১/২ কাপ দুধ
- ১/২ কাপ পেয়াজ বেরেস্তা
- ১/২ কাপ টক দই
- ১৫-১৬ টা কাজুবাদাম
প্রস্তুত প্রনালিঃ
প্রথম ধাপ :
প্রথমে বেরেস্তা, টক দই, কাজুবাদাম একসাথে ব্লেন্ড করে নিবো। এখন চলে যাব রান্নায় এর জন্য চুলায় একটি প্যান বসিয়ে দিয়েছি। এখন এর মধ্যে প্রথমে তেলটা নিয়ে নিব, আর নিয়ে নিচ্ছি ঘি। তেল ঘি গরম হয়ে যাওয়ার পর এতে ১ মিনিট ধরে গরম মশলা গুলো একটু নেড়ে চেড়ে দিব।
দ্বিতীয় ধাপ :
গরম মশলা গুলো হাল্কা গরম হয়ে যাওয়ার পর এতে দিয়ে দিব পেয়াজ কুচি। পেয়াজ টাকে একদম ব্রাউন করার প্রয়োজন নেই, হাল্কা কালার পরিবর্তন হওয়া পর্যন্ত নেড়েচেড়ে ভেঁজে নেব। চুলার আঁচ শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মিডিয়ামে আছে।
প্রায় ৩-৪ মিনিট পেয়াজ টাকে ভেঁজে নেওয়ার পর এখন এর মধ্যে আমি আদা রসুন বাটা টা দিয়ে দিয়েছি।
তৃতীয় ধাপ:
এখন এই আদা রসুন বাটা টাও আমি ১-২ মিনিট নেড়েচেড়ে ভেঁজে নেব যতক্ষণ না পর্যন্ত আদা রসুন এর কাচা গন্ধটা চলে যায় ততক্ষণ পর্যন্ত। আদা রসুন টাকে ভেঁজে নেওয়ার পর এতে আমি এখন অল্প পরিমান পানি মিক্স করে নিবো কারন এতে এখন গুড়া মশলা গুলো দিব।
কারন পানি দিলে গুড়া মশলা গুলো পুড়ে যাবেনা। এখন এর মধ্যে হলুদ,মরিচ,ধনিয়ার গুড়া দিয়ে দিয়েছি আর দিয়ে দিয়েছি লবন।
চতুর্থ ধাপ:
মশলা গুলোকে এখন নেড়েচেড়ে ভাল করে কষিয়ে নিব। যতক্ষণ না পর্যন্ত তেল মশলা থেকে আলাদা হয়ে যায়। মশলা টা ভাল ভাবে কষিয়ে নিয়েছি এখন এর মধ্যে মাংস দিয়ে দিলাম। মাংসটা একটু নেড়েচেড়ে কষিয়ে নিব।
কষিয়ে নিয়ে মাংস ঢেকে দিব এবং চুলার আঁচ টা কমিয়ে মিডিয়াম লো করে দিব। আমি মাংসে কোনো পানি মিক্স করিনি কারন ঢেকে দেওয়ার পর মাংস থেকে যথেষ্ট পরিমান পানি বের হবে।
পঞ্চম ধাপ:
আর সে পানিতে মাংস টা সিদ্ধ হতে শুরু করবে। এখন মাংস টা ঢেকে দিলাম আর এভাবে মাংস টাকে এক ঘণ্টার জন্য রান্না করবো। এ সময়ের মাঝে কয়েকবার এসে মাংস টাকে নেড়েচেড়ে দিতে হবে যাতে নিচে লেগে না যায়।
প্রায় ১০ মিনিট পর আমি মাংসের ঢাকনা টা তুলে নিয়েছি। মাংস টাকে এখন একটু নেড়ে দিবো। আর এ মাংস টা থেকে যথেষ্ট পরিমান পানি বের হয়েছে তাই আমি পানি মিক্স করছি না।
ষষ্ঠ ধাপ:
তবে রান্নার সময় আপনাদের যদি মনে হয় মাংসে পানি লাগবে তাহলে অবশ্যই পানি মিক্স করে নিবেন। আবার ঢেকে দিলাম আর অপেক্ষা করছি মাংসের পানি টা টেনে যাওয়া পর্যন্ত। প্রায় এক ঘণ্টা পর মাংসের পানি অনেকটাই টেনে গেছে। এখন এটাকে আমি একটু নেড়ে দিচ্ছি।
সপ্তম ধাপ:
এরপর বেরেস্তা,টক দই,কাজুবাদাম এর পেস্ট টা এর মধ্যে দিয়ে নেড়েচেড়ে ভালভাবে মিশিয়ে নিবো। এখন এর মধ্যে দিয়ে দিলাম প্রায় ১ কাপ পরিমান পানি। সবকিছুকে ভালভাবে নেড়েচেড়ে মিশিয়ে নিবো আর অপেক্ষা করবো,
পানিটা ফুটে উঠা পর্যন্ত। ঝোল বেশি পছন্দ করলে পানি আরও বাড়িয়ে দিবেন। পানিটা ফুটে উঠার পর এতে আমি আলু বখারা দিয়ে নেড়ে দিয়েছি।
অষ্টম ধাপ:
আবার এটাকে ঢেকে দিবো আর আধা ঘণ্টা পর্যন্ত চুলার আঁচ কমিয়ে রাখবো। আধা ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে আমি ঢাকনা তুলে নিয়েছি মাংসটা কিন্তু অনেকটা সেদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
মাংসটা কে আমি আরেকটু নেড়ে দিচ্ছি। এখন এর মধ্যে আমি ক্রিম আর কাচা মরিচ দিয়ে দিবো। ক্রিম এর জায়গায় যদি দুধ দেন তাহলে বেরেস্তা পেস্ট এর সাথে তখনি দিতে হবে।
নবম ধাপ:
এবার এটাকে আবার নেড়ে দিয়ে ১০ মিনিট এর জন্য আবার ঢেকে দিবো। ১০ মিনিট পর আমি ঢাকনাটা তুলে নিলাম। আর এই মাংস টা এখন হয়ে গেছে। মাংসটার কালার টা দারুন হয়েছে আর সুন্দর একটা গন্ধ বের হচ্ছে।
এখন এতে আমি ১ চা চামচ কেওড়া জল মিশিয়ে নিচ্ছি। কেওড়া জল মিশিয়ে নিলে মাংস টা থেকে আরও সুন্দর গন্ধ আসবে।বিয়ে বাড়ির সেই শাহী রেজালার গন্ধটাই পাওয়া যায়। কেওড়া জলটা দিয়ে মাংস টাকে আরেকটু নেড়ে দিলাম।
দশম ধাপ:
এখন এটাকে ঢেকে দিবো আর চুলাটা বন্ধ করে দিবো। চুলা বন্ধ রেখে মাংস টা আরও ৫ মিনিট ঢেকে রেখে দিবো তারপর মাংসটা আমি পরিবেশন করবো। তৈরি হয়ে গেলো আমাদের বিয়ে বাড়ির গরুর মাংস বা বিয়ে বাড়ির শাহী রেজালা। এটি পোলাও এর সাথে খেতে দারুন লাগে। আবার পরটা বা নান রুটি দিয়ে খেতেও অনেক মজা।
আমি আশা করছি আপনারা এই রেসিপি টা বাসায় রান্না করবেন এবং পরিবার কে সাথে নিয়ে খাবেন। সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।
( রসুন খাওয়ার উপকারিতা এইখানে ক্লিক করে পড়ুন )
( কক্সবাজার সম্পর্কে জানতে এইখানে ক্লিক করে পড়ুন )